SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - কুরআন ও হাদিস শিক্ষা | NCTB BOOK

আমরা মহান আল্লাহর অনুগ্রহে এ পৃথিবীতে বেঁচে আছি। প্রতিনিয়ত আমরা আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামত ভোগ করি। এসব নেয়ামতের শুকরিয়া করা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে মহান আল্লাহ অখুশি হন। পার্থিব উপকরণসমূহ পাওয়ার জন্য আমরা অনেক কষ্ট করে থাকি। মহান আল্লাহ দয়াপরবশ হয়ে এগুলো আমাদের দান করেন। দুনিয়া আখিরাতের সমস্ত নেয়ামতের মালিক মহান আল্লাহ। তাই এগুলো অর্জন করোর জন্য তাঁরই নিকটে প্রার্থনা করা একান্ত প্রয়োজন। আল্লাহ তা'আলার নিকট কোনকিছু পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করাকে মুনাজাত বলে। মুনাজাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। হাদিসে মুনাজাতকে ইবাদাতের সারবস্তু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে মুনাজাতের পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। কুরআন মাজিদে মুনাজাতমূলক অনেক আয়াত রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মুনাজাতের আয়াত এখানে উল্লেখ করা হলো। আমরা এগুলো শিখব এবং এর অর্থ জানব। এর পর এগুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে আমাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য দোয়া করব।

 

আয়াত-১

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতের কল্যাণ দান করুন; আর আমাদেরকে অমির শাস্তি হতে রক্ষা করুন।' (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২০১)

প্রত্যেক মুমিন বান্দা বিশ্বাস করে যে, মৃত্যুর পর পুনরায় তাকে জীবিত করা হবে এবং তাঁর কৃতকর্মের হিসাব নেয়া হবে। মৃত্যুর পরবর্তী এই সময়কে বলা হয় আখিরাত। আখিরাতের সময়কাল পৃথিবীর মতো অস্থায়ী নয়। বরং তা হবে অনন্ত, অসীম যার কোনো শেষ নেই। একজন মানুষের আখিরাত আনন্দময় হবে নাকি কষ্টের হবে তা নির্ভর করে দুনিয়ায় সে কী আমল করেছে তার উপর। কেউ যদি দুনিয়ায় ভালো কাজ করে, আল্লাহর আনুগত্য করে তাহলে তার আখিরাত সুন্দর হবে। অপরদিকে কেউ যদি দুনিয়ায় খারাপ কাজ করে তাহলে তাকে আখিরাতে শাস্তি পেতে হবে। পৃথিবী হলো মুমিন বান্দার পরীক্ষার ক্ষেত্র। এজন্য একজন মু'মিনের দুনিয়ার জীবন গুরুত্বপূর্ণ আবার আখিরাতের জীবনও গুরুত্বপূর্ণ। এই আয়াতে মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন, তারা যেন শুধু দুনিয়ার কল্যাণ কামনা না করে। বরং দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জগতের কল্যাণ ও সফলতা চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করে।

 

আয়াত-২

رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيْنِي صَغِيرًا

 'হে আমার প্রতিপালক, আপনি তাঁদের দুজনকে (বাবা ও মা) দয়া করুন। যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।' (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৪)

আমরা পৃথিবীতে এসেছি আমাদের বাবা ও মায়ের মাধ্যমে। তাঁরাই আমাদেরকে লালনপালন করে বড় করেছেন। যখন আমরা খুব ছোট ছিলাম, নিজেদের কাজ নিজেরা করতে পারতাম না, নিজেদের হাতে খেতে পারতাম না, তখন মা-বাবা আমাদেরকে প্রতিপালন করেছেন। তাঁরা নিজেরা শত কষ্ট সহ্য করেও আমাদেরকে সুখে শান্তিতে রাখার চেষ্টা করেছেন। নিজেদের সুখ-শান্তির কথা ভুলে গিয়ে তাঁরা আমাদের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করেছেন। মা গর্ভধারণের কষ্ট সহ্য করেছেন। বাবা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে আমাদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন। এসবের কোনো বিনিময় এবং প্রতিদান দেয়া আমাদের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। তাই আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে এই দোয়াটি শিখিয়ে দিয়েছেন। আমরা যেন এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার কাছে মা বাবার জন্য কল্যাণ কামনা করি।

 

আয়াত-৩

رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا

হে আমার প্রতিপালকা আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ করুন।' (সূরা তা-হা, আয়াত: ১১৪)

আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে অসংখ্য মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। সাগরে প্রকাণ্ড নীল তিমি, স্থলের বিশালদেহী হাতি আরো কত কিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি যে কত বৈচিত্র্যময় ও সুন্দর প্রাণী সৃষ্টি করেছেন, তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। কিন্তু সকল কিছুর উপরে মানুষকেই আল্লাহ তা'আলা শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সকল সৃষ্টির উপর মানুষকে মর্যাদা দেয়ার একটিই কারণ- আর তা হলো মানুষের জ্ঞান ও বিবেক। মানুষ তার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে পারে। আল্লাহর আনুগতা করতে পারে যা অন্য কোনো প্রাণির পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য জ্ঞান অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মহানবি (সা.) বলেন- সকল মুসলিমের জন্য আন অন্বেষণ করা ফরয। সকল জ্ঞানের মালিক মহান আল্লাহ। তিনিই একমাত্র জ্ঞানদাতা। তিনি যাকে খুশি তা দান করেন। তাই আয়াতে মানুষকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে যেন তারা আল্লাহর কাছে আন বৃদ্ধির জন্য মুনাজাত করে। আমরা জ্ঞানার্জনে কোন অবহেলা করব না। সর্বদা উপকারী জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য সকল জ্ঞানের উৎস মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করব।

Content added By